বঙ্গোপসাগর জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি উপক্রান্তীয় এবং বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। যা বর্তমানে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলির বর্জ্যের কারণে দূষণের শিকার। এই দূষণ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও উপসাগরের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই বিপর্যয় থামাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বঙ্গোপসাগর বিভিন্ন উৎস থেকে দূষিত হচ্ছে। শিল্প বর্জ্য, অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন ও প্লাস্টিক ধ্বংসাবশেষ নিয়মিত সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। কৃষি থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ও সার পানিতে মিশে দূষণ ঘটাচ্ছে। এই দূষণ সামুদ্রিক জীবন এবং উপসাগরের উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলেছে।

দূষণের ফলে প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হচ্ছে এবং মাছের সংখ্যা কমছে। কচ্ছপ ও ডলফিনের মতো প্রজাতি প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে। দূষণ খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত করে শিকারি প্রজাতির হ্রাস ঘটায়, যা জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে ক্ষতিকারক অ্যালগাল ফুলের সৃষ্টি করে।

উপকূলবর্তী সম্প্রদায় দূষণের কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মৎস্যজীবীরা মাছ কম পাচ্ছেন, যা তাদের আয় ও খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে। দূষিত পানি চর্মরোগ ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অসুস্থতা বাড়াচ্ছে।

দূষণের পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও মারাত্মক। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি ও উপকূলীয় ক্ষয় উপসাগরের স্বাস্থ্যকে আরও খারাপ করছে। জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজন কৌশল জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস, উপকূলীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা ও টেকসই কৃষি ও শিল্প অনুশীলন।

সরকারকে কঠোর বর্জ্য নিষ্পত্তি নিয়ম বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ভালো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে হবে। শিল্পগুলিকে বর্জ্য পরিশোধন বাধ্যতামূলক করতে হবে। জনসচেতনতা প্রচার, দূষণের প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে জানানো এবং টেকসই অনুশীলন উৎসাহিত করা জরুরি। ক্লিন-আপ ড্রাইভে কমিউনিটির অংশগ্রহণও দরকার।

সুশীল সমাজ ও এনজিওগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংরক্ষণ প্রকল্প, পরিবেশগত নীতির পক্ষে অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা করে তারা সাহায্য করছে। এনজিওগুলি জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছে।

সরকারকে বঙ্গোপসাগরে বিশেষ সুরক্ষিত এলাকা (এমপিএ) স্থাপন করতে হবে যেখানে মানুষের কার্যকলাপ সীমিত থাকবে। টেকসই জীবিকা ও মাছ ধরার কৌশলের জন্য জেলেদের ভর্তুকি প্রদান জরুরি। উপসাগরের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও দূষণের উৎস এবং প্রভাব নিয়ে গবেষণা কার্যকর নীতি নির্ধারণে সাহায্য করবে। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা দক্ষতা ও সংস্থান আনতে পারে।

বঙ্গোপসাগর রক্ষায় সরকার, শিল্প ও ব্যক্তিদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। দূষণ কমানো, জলবায়ু অভিযোজন ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও টেকসই বঙ্গোপসাগর নিশ্চিত করতে পারি। আসুন, এই মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় এখনই উদ্যোগী হই।


লেখকঃ মো. ইলিয়াছ মিয়া, প্রধান নির্বাহী, সিইএইচআরডিএফ